Breaking News

অবশেষে বারবার ভূমিকম্পের কারণ খুজেঁ পেল ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র

নভেম্বরে একের পর এক ভূমিকম্প ও আফটারশক অনুভূত হওয়ায় সারা দেশে উদ্বেগ বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এগুলো কি দেশের গ্যাস উত্তোলন বা গোপনে পরিচালিত কোনো ফ্র্যাকিং কার্যক্রমের ফল? নাকি সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক ভূ-টেকটোনিক চাপের প্রকাশ?

বিশেষজ্ঞ, সরকারি তথ্য, আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সাম্প্রতিক সংবাদ বিশ্লেষণ বলছে—বাংলাদেশে কোনো বড় আকারের শেল গ্যাস ফ্র্যাকিং চলছে এমন প্রমাণ নেই। সাম্প্রতিক কম্পনগুলো বাংলাদেশ অঞ্চলের স্বাভাবিক টেকটোনিক সক্রিয়তার কারণেই ঘটছে।

ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি সাধারণত ভূগর্ভের গভীরে থাকা শেল গ্যাস বা টাইট অয়েল তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে উচ্চচাপে পানি ও রাসায়নিক মিশ্রণ ঢুকিয়ে পাথরের স্তর ফাটানো হয়।

গত ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীতে ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ইউরোপীয় সিসমোলজিক্যাল কেন্দ্র (ইএমএসসি) জানায়, কম্পনের গভীরতা ছিল ১০–২৭ কিলোমিটার—যা স্পষ্টভাবে একটি গভীর টেকটোনিক ফল্টে সৃষ্ট ভূমিকম্পের লক্ষণ। এর পরদিন রাজধানীর বাড্ডাসহ আশপাশের এলাকায় ৩–৪ মাত্রার একাধিক আফটারশক অনুভূত হয়।

বাংলাদেশ ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র জানায়, ২০২৫ জুড়ে ভূমিকম্পের সংখ্যা দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় বেশি, যা ভূগর্ভে চাপ জমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ অবস্থায় গ্যাস উত্তোলন ও ফ্র্যাকিং নিয়ে নানা জল্পনা উঠছে। তবে পেট্রোবাংলার বার্ষিক প্রতিবেদন, গ্লোবাল এনার্জি মনিটর, এবং আন্তর্জাতিক জার্নালগুলো বলছে—বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রে এখনো প্রচলিত ড্রিলিং প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হয়। দেশে ফ্র্যাকিংয়ের মতো বড় অবকাঠামো নেই।

ওয়ানপেট্রো ও ডব্লিউওএআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূগর্ভে শেল গ্যাসের স্তর ঘন, পুরু বা সমজাতীয় নয়—ফলে বাণিজ্যিকভাবে ফ্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন এখানে প্রায় অসম্ভব। ফ্র্যাকিং ব্যবস্থার স্বাভাবিক লক্ষণ—হাজার হাজার অনুভূমিক কূপ, প্রচুর পানি-রাসায়নিক পরিবহন—এসবের কোনোটিই দেশে দেখা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্র্যাকিং বা সাধারণ গ্যাস উত্তোলন কখনো কখনো খুব অগভীর, ছোট মাত্রার (২–৪ মাত্রা) কম্পন তৈরি করতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক ৫-এর ওপরে মাত্রার এবং গভীর উৎসের ভূমিকম্পের সঙ্গে গ্যাস উত্তোলনের কোনো বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ তিনটি সক্রিয় ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত—ডফলা ফল্ট, দ্বারিকা ফল্ট ও মেঘনা ফল্ট জোন—যেগুলোতে দীর্ঘদিনের চাপ হঠাৎ মুক্ত হলে এমন ভূকম্পন স্বাভাবিক।

তবে গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাব্য সামান্য প্রভাব একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্পের পর পেট্রোবাংলা ৪৮ ঘণ্টা ড্রিলিং বন্ধ রাখে—এটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মাত্র, কোনো ঝুঁকির ইঙ্গিত নয়।

সব মিলিয়ে বর্তমানে বড় ভূমিকম্পের পেছনে গ্যাস উত্তোলন বা ফ্র্যাকিংকে দায়ী করার মতো কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ভূমিকম্পগুলোর মূল কারণ ভূগর্ভের স্বাভাবিক টেকটোনিক চাপ ও সক্রিয় ফল্ট লাইনগুলোই—বলছেন গবেষকরা।

About Admin

Check Also

স্বামীসহ গৃহকর্মী আয়েশা ৩ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার ও তার স্বামী রাব্বির ৩ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *