বাংলাদেশে শুক্রবার আঘাত হানা ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সারা দেশে তীব্র দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এ ঘটনায় মারা গেছেন ১০ জন—ঢাকায় তিনজন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দুইজন করে এবং নরসিংদীতে পাঁচজন। আহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ।
গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সংঘটিত ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী, জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, ঢাকা ও আশপাশে এটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পন।
যেকোনো সময় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রব সতর্ক করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এমন একটি সক্রিয় টেকটনিক প্লেটে অবস্থান করছে, যেখানে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, “আমরা যেকোনো সময় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারি।”
তিনি অতীতের বড় ভূমিকম্পগুলোর উদাহরণ দেন—
১৮৯৭ সালের আসাম–মেঘালয়ের ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প,
জৈন্তিয়া পাহাড় অঞ্চলের ৮ মাত্রার ভূমিকম্প,
আরাকানের ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প।
ইতিহাস অনুযায়ী শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বড় একটি ভূমিকম্পের জন্য “রিকারিং পিরিয়ড” শেষ হয়ে এসেছে, তাই এখনই প্রস্তুতি বাড়ানো জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানান, ভূমিকম্পপ্রবণ এই অঞ্চলে যেকোনো সময় আরও বড় ধরনের কম্পন হতে পারে, তবে সুনির্দিষ্ট সময় বলা অসম্ভব।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বলেন, অতীতে দেশে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটেছে—
২০০৩ সালে রাঙ্গামাটির বরকলের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প
১৯১৮ সালে দেশের অভ্যন্তরে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প
তিনি আরও জানান, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের মহড়া ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। উদ্ধারকাজের বাজেট বরাদ্দ থাকলেও তা যথাযথভাবে ব্যবহার হয় না।
সতর্কতা ও প্রস্তুতির তাগিদ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে এখনই সরকারি প্রস্তুতি, অবকাঠামোগত সুরক্ষা, এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার না করলে বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে।
BN NEWS My WordPress Blog